আজ পবিত্র হজের দিন। আরাফার প্রান্তরে ‘লাব্বাইক’ ধ্বনি, বিশ্বের ১৪ লাখ মুসলমান আজ একত্রিত

 

 


আজ বৃহস্পতিবার, সৌদি বর্ষপঞ্জি অনুযায়ী ৯ জিলহজ, পবিত্র হজের দিন—ইয়াওমুল আরাফা  আরাফাতের ময়দানে জড়ো হয়েছেন বিশ্বের নানা প্রান্ত থেকে আগত প্রায় ১৪ লাখ ধর্মপ্রাণ মুসলমান। মুখে সবার একই ধ্বনি—“লাব্বাইক আল্লাহুম্মা লাব্বাইক”—প্রভুর ডাকে সাড়া দিয়ে একত্রিত হয়েছেন তারা।

আল্লাহর সন্তুষ্টি ও ক্ষমা লাভের আশায় আজ আরাফার প্রান্তর, বিশেষ করে জাবালে রহমতের চূড়া ও পাদদেশে হাজারো হাজির কান্না ভেজা প্রার্থনায় মুখরিত হয়ে উঠেছে। ময়দানে দাঁড়িয়ে তারা বারবার উচ্চারণ করছেন—

“ইন্নাল হামদা ওয়াননি’মাতা লাকা ওয়াল মুলক; লা শারিকা লাক”
(সব প্রশংসা ও নিয়ামত একমাত্র তোমারই, হে আল্লাহ; তোমার কোনো শরিক নেই)।

এই সেই পবিত্র ভূমি, যেখানে প্রায় দেড় হাজার বছর আগে রাসুলুল্লাহ (সা.) দিয়েছিলেন তাঁর ঐতিহাসিক বিদায় হজের খুতবা। তিনি ঘোষণা করেছিলেন,
 

“আজ আমি ইসলামকে পূর্ণাঙ্গ ধর্ম হিসেবে ঘোষণা করছি।”
এই ঘোষণার প্রতিধ্বনি যেন আজও বাজছে হাজিদের অন্তরে।

আজ মসজিদে নামিরা থেকে হজের খুতবা প্রদান করছেন মসজিদুল হারামের প্রধান ইমাম ও মুফতি, শায়খ ড. সালেহ বিন হুমাইদ। তাঁর আরবি ভাষণের তাৎক্ষণিক অনুবাদ বিশ্বের ৩৪টি ভাষায় সম্প্রচার করা হচ্ছে। খুতবার পর তাঁর ইমামতিতে হাজিরা একত্রে জোহর ও আসরের নামাজ আদায় করছেন।

সূর্যাস্তের পর হাজিরা আরাফাত ত্যাগ করে মুজদালিফার উদ্দেশে যাত্রা করবেন। সেখানে খোলা আকাশের নিচে রাত যাপন করে মাগরিব ও এশার নামাজ একত্রে আদায় করবেন। সেখান থেকেই আগামী দিনের ‘রামি’—শয়তানকে পাথর নিক্ষেপের জন্য সংগ্রহ করবেন নির্দিষ্ট পাথর।

আগামীকাল ১০ জিলহজ শুক্রবার সৌদি আরবে পালিত হবে ঈদুল আজহা। স্থানীয় মুসল্লিরা ঈদের নামাজ আদায় ও কোরবানি করবেন। অন্যদিকে হাজিরা মুজদালিফা থেকে ফজরের নামাজ পড়ে মিনায় ফিরে গিয়ে বড় শয়তানকে (জামারাহ আল আকাবাহ) পাথর নিক্ষেপ করবেন। এরপর পশু কোরবানি ও পুরুষদের মাথা মুণ্ডনের পর শুরু হবে তাওয়াফ আল ইফাদা—হজের প্রধান তাওয়াফ।হাজিরা এরপর আবার মিনায় ফিরে গিয়ে ১২ জিলহজ পর্যন্ত প্রতিদিন তিনটি জামারাহতে (ছোট, মাঝারি ও বড় শয়তান) পাথর নিক্ষেপ করবেন। তারপর বিদায়ী তাওয়াফ করে হজের চূড়ান্ত আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করবেন।

সৌদি হজ কর্তৃপক্ষ হাজিদের নিরাপত্তা ও সুশৃঙ্খল ব্যবস্থাপনার জন্য ১০ থেকে ১২ জিলহজের মধ্যে যেকোনো একদিনে তাওয়াফ আল ইফাদা সম্পন্ন করার সুযোগ দিয়েছে।

৮ জিলহজ থেকে শুরু হয়েছে হজের মূল কার্যক্রম। গতকাল মিনায় অবস্থান, ইবাদত ও পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায়ের মাধ্যমে হাজিরা রাসুল (সা.)-এর সুন্নাত পালন করেছেন। সৌদি কর্তৃপক্ষ মঙ্গলবার রাত থেকেই অধিকাংশ হাজিকে মিনায় পৌঁছে দেয়ার ব্যবস্থা করে, যাতে বিশাল এই আয়োজন নির্বিঘ্ন হয়।বাংলাদেশ থেকে এ বছর ৮৭,১৫৭ জন ধর্মপ্রাণ মুসলমান হজ পালন করছেন। তীব্র গরম, দীর্ঘ ভ্রমণ আর শারীরিক কষ্ট উপেক্ষা করে তারা যোগ দিয়েছেন এই ঐতিহাসিক মিলনমেলায়—পাপমুক্তির আশায়, প্রভুর সন্তুষ্টির আশায়। 

এই হজ শুধু একটি আনুষ্ঠানিকতা নয়, এটি তাওহিদের শপথ, ক্ষমা প্রার্থনার অশ্রুসিক্ত সমাবেশ এবং মুসলিম উম্মাহর ঐক্যের অনন্য উদাহরণ

Post a Comment

0 Comments